নাগরিক শিকড়ের খোঁজে
রবীন বসু
সারা দেশ মিটিং করছে, মিছিলে পা মেলাচ্ছে
টুইটারে লিখছে নিজেদের মতামত,
সম্প্রীতির কথা বলছে সবাই
চ্যানেলের সান্ধ্য বাসরে অসহিষ্ণু বিতর্ক
সরকারী বিজ্ঞাপন প্রচারে সতর্কতা…
তবুও
চারপাশে এত আগুন, এত ক্রোধ, মরিয়া হিংসা
আর দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষের
অন্নহীন পাত…
এসব দেখে আপনাকে বলি, হে ভদ্রমহোদয়
এতকাল আমরা তো মিলেমিশে ছিলুম,
ছিদামমুদির দোকানে আরসেদ শেখ
বাজার করত। জয়নাল ভোরবেলায়
জিরেনকাটের রস আনলে গাঁয়ের সবাই খেত ।
এক আলে বসে দুই ধর্মের মানুষ তামাক খেত।
নরেন বামুনের বউ হালিমন বিবিকে
পান সেজে দিত। বৈষ্ণব আখড়ায় বসে
কানে আজানের সুর নিত নতুন বৈষ্ণবী।
মসজিদের মৌলবী খোল-কর্তালের শব্দে
বিরক্ত হতেন না। জারি সারি ভাদু ঝুমুর
আলকাপে মেতে উঠতে গ্রামীন মানুষ। আমরা রবীন্দ্রনাথ যেমন পড়ি, মুজতবা আলীও পড়ি। নন্দলালের ছবির সাথে মুকুল ফিদা হুসেন দেখি।
আমরা তো মিলেমিশে ছিলুম সহোদর ভাই হয়ে
তবে কেন আজ প্রশ্নচিহ্ন ঘিরেছে আমাদের?
কারা তুলছে হাই? কারা ঘাই মারছে অস্থির জলে?
এসব বুঝে নেওয়া খুব জরুরি এখন।
শিকড়ে ঐতিহ্য আছে, যত্নে লালিত বিশ্বাস
বর্ণে বর্ণে পতাকা ওড়ে ত্যাগ ও সহিষ্ণুতার।
এ মাটি আমার চিহ্ন, এ মাটি তোমারও চিহ্ন
এ ভিটা আমার পৈত্রিক, ও ভিটা তোমার আব্বার
মাঝখানে বহু বিপর্যয়েও সুস্থির সহাবস্থান।
তবু আজ কারা বিভেদের পাঁচিল তুলতে চাইছে?
কারা রাজনীতির বোড়ে করছে মানুষকে।
তারা গরীবের মুখে ভাত দিতে পারে না,
বেকারকে দেয় না চাকরি, শিশুদের শিক্ষা নেই, জিনিসের দাম আগুন, স্বাস্থ্য নেই---
কৃষক পায় না ফসলের ন্যায্য দাম,
পায় শুধু আত্মহত্যার দড়ি।
অথচ এরা বলছে এরা নাকি দেশপ্রেমিক।
এদের মনে দেশও নেই, প্রেমও নেই
এরা রামের নাম বলে মুখে আর হিংসা রাখে জিভে
মৌলবাদের নখদন্ত বিকশিত করে।
আগুনে আগুনই বাড়ে বেড়ে যায় লোভ
সংখ্যাধিক্য ভোটে জিতে স্বৈরাচারী অভিমুখ
কৌশলে কৌশল খোঁজে ইত্যাকার বাহানা।
তবুও মানুষ জাগে নাগরিক শিকড়ের খোঁজে
অনিকেত ছিন্নমূল ভয় গ্রাস করে সমগ্র ভারত।
তারা চিৎকার করে বলছে,
'নো এন আরসি, নো ফ্যাসিবাদ, নো ক্যাব'।
No comments:
Post a Comment