Tuesday, December 24, 2019

কবিতাগুচ্ছ বেবী সাউ







ক্রুশকাঠের রক্ত


বুলেট দিয়ে দেশপ্রেমিকেরা
পথে নামেন শাসন করবে বলে;
দেশ মানে কী বোঝাই যাচ্ছে না --
মানুষ না কি মানচিত্র শুধু?
দেশপ্রেম ঘাড়ের উপর চাপে
দেশপ্রেম চাবুক হয়ে যায়
দেশপ্রেম মানে মানুষ নয়
দেশপ্রেম মানে শাসকপুজো...
মানুষ এবং দেশপ্রেম আজ
লড়াই করে প্রতিপক্ষ হয়ে
মানুষ ছাড়া কোন দেশে তুই রাজা
দেশপ্রেম বোঝাবি এইভাবে?
শাসক তুই মানুষ, তাই শোন
মানুষ ছাড়া দেশের মান নেই
মৃত দেশের মানচিত্র থাকে
পোড়া জমির ধূসর হয়ে শুধু
এ দেশ মানে কবরখানা নয়
এ দেশ মানে শ্মশান নয় শুধু
বুলেট দিয়ে শাসন করা যায়
শস্যক্ষেতে বৃষ্টি হওয়া যায় না
আগামী কোনও যুদ্ধ হোক তবে
দেশের সঙ্গে দেশপ্রেমিকের
ভুলে যেওনা মানচিত্রখানি
মানুষ আঁকে, মানুষ-ই ছিঁড়ে ফেলে!


আমার গ্রাম আলোয় ভেসে ছিল
বর্গী এলো ছিনিয়ে নিতে সব
বাস্তুভিটে, জমি এবং মান
পূর্বপুরুষ, ইতিহাসের ঘর
আমার দেশ আলোয় ভরে ছিল
অন্ধকারে ঝাঁপাল সন্ত্রাস
হিন্দু নাকি মুসলমান তুমি?
রিফিউজি কি? ভেঙেছ কাঁটাতার?
তোমার কোনো কাগজপত্র আছে?
মানুষ হওয়া কোনো প্রমাণ নয়
পাখির ডানায় দেশের নাম লিখে
সীল মোহর দেব এবার সুরে
আমরা যাকে বলব সেই কবি
আমরা যাকে ছাড়পত্র দেব
আমরা যাকে ধর্ম বলি তার
বাইরে কোনো ধর্ম আর নেই
আমার পেটে জমছে বড় খিদে
আমার মনে জমছে বড় রাগ
আমার চোখ দু;খে ধুয়ে গেছে
আমার জমি ছিনিয়ে নেওয়া পাপ
তোমার চোখে চিতাবাঘের খিদে
তোমার চোখে শাসন করে লোভ
ক্ষমতা তার ধর্ম জানে শুধু
ক্ষমতা তার পোশাক বেছে নেয়
আমার গ্রাম অন্ধকারে ডুবে
অবিশ্বাস দুচোখে শান দেয়
শস্যক্ষেত শ্মশান হয়ে গেলে
তুমি কোথায় খাবার পাবে রাজা?
মানুষ শুধু মানুষ, জানি আমি
আমার ভিটে অন্য কারো নয়
আমার জমি যেটুকু বাঁধা আছে
তাকে তুমিও পোড়াতে পারবে না
যত আইন করেছ তত বেশি
আমি আগুন হয়েছি ভালোবেসে
তুমি তোমার ক্ষমতা নিয়ে থাকো
আমি আমার কাব্যে ডুব দিই
মহাকালের ভূমিকা বেছে নিয়ে
তুমি কেবল আত্মপ্রতারক
নিজেকে করো অনুসরণ শুধু
রক্তে আজ রয়েছে লেগে বিষ
শাসক হওয়া অসুখ, জেনে নিও
আমি কারোর শাসন মানছি না
আমি কারোর ধর্মদাসী নই
আমার দেশ আকাশ ছুঁয়ে আছে
আমার দেশে এসো বরং তুমি
একটি ছোট জমিও রেখে দেব
ধর্মহীন দেব আকাশ, মাটি
দেব নতুন নদীর স্রোতটুকু
ভালোবাসায় শাসক মরে যায়
ভালোবাসায় ক্ষমতা মরে যায়
ভালোবাসায় অসুখ সেরে যায়
আমার দেশ হবে আবার দেশ
আমার দেশে কোথাও কাঁটাতারে
রক্ত আর মাংস লেগে নেই
কোথাও নেই পোড়াজমির ক্ষত
আমরা ফের আগুন নিয়ে খেলে
এমন দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাব
আকাশ জল মাটির সংসার
মানুষ, যার সীমানা নেই কোনো


চিরকুটে যা লেখা ছিল…

সোনার খোঁজে পাথরবাটি 
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ল যখন 
গ্রাম ডিঙিয়ে শহর ভেঙে 
অসংখ্যক কালপুরুষ নক্ষত্রের ছায়া ফুটে উঠল রান্নাঘরে 

পূর্বজ্ঞান সম্বল করে অপরিচিত অতিথিদের 
এগিয়ে দিলাম 
পা ধোয়ার জল
ফুল বাতাসা, তিলের নাড়ু 

তারা অভিজ্ঞতা স্বরূপ তুলে দিল 
সুদূর নক্ষত্রালোকের ছাই ভস্ম 
ভবতারিণীর ক্ষয়ে যাওয়া মুখ নাকের ছবি

এরপরে যা যা ঘটল পরবর্তী 
চিঠিতে জানাবো...   


তারপর…

এসব কথা বহু পূর্বকাল থেকে
মুখে মুখে ফেরে...

অথচ সেভাবে কোনও স্পৃহা না থাকায় 
বালিয়াড়ির খাদে কোনও অকালের জীবাশ্মকে সাক্ষী মেনে 
আমাদের বিবাহকে সুদৃঢ় করা হল 

হাততালি এবং গালগল্পে ভরে গেল 
পেয়ালার শ্যাম্পেন 
অসংখ্য ফ্ল্যাশ লাইটের তীব্রতা

ঘন নিশ্বাসে আমরা সেই বিছানাটির অপেক্ষা করলাম 

একটা কঙ্কাল ব্যতীত ওখানে 
কিছু অবশিষ্ট ছিল না  


অধিকার

অথচ আলোকিত তবুও বিভ্রম ছড়ায়ে পড়িয়াছে আন্দোলনে 
তুমিও পলাতক, প্রতিটি সুসময় বাজছে গোঠে আজ মোহনবাঁশি 
সময় নিভন্ত তবুও সন্ত্রাসে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেখো প্রবল রোদ 
এ রোদ মোহময়, এ রোদ আনন্দে রাজার পথ ভেজে রক্ত ছাড়া   
এখানে আলপনা এঁকেছে নাগরিক এখানে শস্য খেত কৃষকেরই 
বর্গী উঠে গেছে নেই তো জমিদার এ ভূমি কৃষকের সম্পত্তি 


এ দিন আনন্দ,  এদিন সুসময়, এদিন এসে যাবে তুমি চাইলেই...

No comments:

Post a Comment