Wednesday, December 25, 2019

তন্ময় ধর




অনাগরিক

১।
আমার কাছে সূর্যোদয়ের কাগজপত্র চাওয়া হয় একদিন
মুন্ডহীন এক সাপের দেহবোধ স্থির হয়ে থাকে আমার সামনে
তরল কোষপ্রাচীরে আটকে থাকা অন্ধকারে
তর্জনীর শব্দের পাশে এসে দাঁড়ায় একটা ছায়া

আলোর ওপর অগণন মাছের কঙ্কাল
মৃত নৌকায় রক্ত ও মাতৃদুগ্ধের দাগ
খিদের অর্থহীন ভূগোলে টোকা পড়ে
‘স্যর, একটু বাইরে আসবেন’

বুকের যন্ত্রণার সামান্য নীচে গুলিটা লেগেছিল
ওখান থেকে উড়ে গেল অজস্র মৎস্যভুক পাখি
কাগজপত্রে সই করতে করতে
আমি কামড় বসালাম পক্ষীমাংসে

২।
কাগজ ছিঁড়ে ফেলল প্রাচীন এক হাওয়া
নৌকার ধ্বংসাবশেষে ভিতর আমরা লুকিয়ে রইলাম
স্মৃতিহীন শামুক-ঝিনুকের বিছানায় আমাদের পাশে অঙ্ক করতে বসলেন মিলাঙ্কোভিচ
পৃথিবীর কক্ষপথ একটু একটু করে হেলতে থাকল আমাদের রক্তাক্ত রুটিতে

আমাদের অবেলার ঠান্ডা ভাতের পাশে নেরুদার আঙুল, চিলির সৈকতের মাইল মাইল অন্ধকার
ভিদেলার স্বৈরাচারী অশ্বের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আমার অতিকায় পিতামহ
নীল চোখের তারায়, ঘুমে ফিরে আসছে আমার মৃত সঙ্গীদের খিদে, ব্যথা, ছায়াচিৎকার
বৃত্তকার পাখির দল ফিরে যাচ্ছে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মরদেহের পাশ দিয়ে

বাস্তুজমি নিশ্চিহ্ন হয়েছে কবেই, মৃগশিরা-ফসলের কাল, আলপথ
আদিম মানুষের কঙ্কাল খুঁড়তে খুঁড়তে আমি ও প্রপিতামহ ক্লান্ত হই
নাস্তিক পন্ডিতের ভিটার পাশ দিয়ে আমরা চুপচাপ হাঁটতে থাকি
বৃশ্চিক নক্ষত্রের দিকে

৩।
পোড়া কাগজের নীচে গান লিখছেন গিরীন চক্রবর্তী
কিশোরগঞ্জের মৃতদেহগুলির সাথে বড্ড মিল ছিল আমার আত্মীয়দের
শেষ মুহুর্তে দৌড়ে গোয়ালঘরের দরজা খুলে দিয়েছিলেন মেসোমশাই-
‘অবলা জীবগুলি কেন মারা পড়বে?’

কম্পাসের সৌন্দর্য্যের নীচে পড়ে আছে দিগভ্রষ্ট মানুষের শীত
ধূসর কালিতে লেখা ধানরঙ শিশুর জন্মপঞ্জি, জ্যামিতি, জল, গর্ভফসল
কিছুই নেই, শূন্যতার ওপর জাল বোনে মেঠো মাকড়সার দল
ভোরের শিশির জমে জাল ভারী হয়
আমার অন্ধত্বের সামনে মাংসের ভিতর মাংস কাটছে একটা মুখ
একটা মুখোশ হিসেব করতে করতে আমাকে লুকিয়ে রাখছে মাংসের ভিতর
একটা হাওয়া আমার খিদের ঢাকনা সরিয়ে দিচ্ছে
আমার পিতামাতার জন্ম হচ্ছে কাঁটাতারের সবচেয়ে ধারালো অংশে

No comments:

Post a Comment