হ্যাঁ, অন্যান্য বারের মতো সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে নয়, বরং খুব সচেতন ভাবে, স্পষ্ট ভাবে বলছি, আমরা এন আর সি-র বিরুদ্ধে, সি এ এ -এর বিরুদ্ধে, এন পি আর-এর বিরুদ্ধে। বর্তমানে ভারতের শাসনে যে দল এবং যে ব্যক্তিগুলি রয়েছেন, তাঁরা ও তাঁদের দল ভারতবর্ষে আনতে চলেছে হিন্দুরাষ্ট্র। আমরা সেই হিন্দুরাষ্ট্রের বাসিন্দা হতে ঘৃণা বোধ করি। এই হিন্দুরাষ্ট্র আমাদের দেশ নয়। এই হিন্দুরাষ্ট্রে কাগজপত্র থাকলেও আমরা বিদেশি-ই।
এ কথাও স্পষ্ট ভাবে বলার সময় এসেছে, যে, যে দেশে আমি জন্মালাম, যে দেশের মাটিতে জন্মানো শস্য থেকে খাদ্যগ্রহণ করলাম, যে দেশের জল খেলাম, সেই দেশের আকাশ জল ও মাটির কাছে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণপত্র দেখানোর অর্থ হল প্রধানমন্ত্রীকে বলা তাঁর মায়ের কাছে গিয়ে নিজের বার্থ সার্টিফিকেট দেখিয়ে বলা যে এই যে আমি তোমার সন্তান, তার প্রমাণ।
নিজের দেশ তো নিজের মায়ের মতোই স্বাভাবিক। এ দেশের জল, হাওয়া, মাটির সঙ্গে, গাছের সঙ্গে, শস্যের সঙ্গে, আমাদের সম্পর্ক মায়ের সঙ্গে সন্তানের মতো। এ নাড়ি ছেঁড়ে না। জিনের মধ্যে থাকে। ঠিক দেশের সীমান্তরেখা দিয়ে এই সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা যায় না বলেই ঋত্বিক ঘটক বাংলাদেশের আকাশে হেলিকপ্টারে করে যেতে যেতে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন। এটি বোঝার ক্ষমতা সম্ভবত উগ্র দেশপ্রেমিকদের থাকেনা, কারণ তাঁরা ভালোভাসেন তাঁদের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করার দিকে, দেশের সঙ্গে বন্ধন ঠিক কোথায়, তা জানার জন্য নয়।
এ কথা স্পষ্ট ভাবে বলার সময় এসেছে, যে আমাদের আর হিন্দু-মুসলমান-মন্দির-মসজিদ দিয়ে ভাগ করা যাবে না। আমাদের রুটি চাই, একজন কৃষক যাতে আত্মহত্যা না করেন, তার নিশ্চয়তা চাই, আগুন বাজার যাতে মানুষের নাগালের মধ্যে আসে, তার ব্যবস্থা চাই, স্কুল চাই, কলেজ চাও, স্বাস্থ্যপরিষেবা চাই সমগ্র দেশে। আম্বানি চাইনা, আদানি চাই না, শপিং মলের ভিড় চাই না, কর্পোরেটদের হাতে দেশকে বেচে দিতে চাই না, উন্নয়নের নামে উগ্র দেশপ্রেম আর উগ্র দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে স্টেশন-শহরের নামবদল থেকে মন্দির তৈরি চাই না, ধর্মের নামে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ চাই না।
উত্তরপ্রদেশে যে নির্বিচারে গণহত্যা করছে, প্রতিশোধের রাজনীতি করছে যোগীর পুলিশ, আমরা তার বিচার চাই। নাগরিক পঞ্জীর নাম করে সারা দেশে আগুন জ্বালিয়েছে এই রাষ্ট্র। আমরা এই রাষ্ট্রের এই ভূমিকার বিরোধিতা করি। এই রাষ্ট্র, যার প্রধামন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং গৃহমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ, আমরা এমনিতেই সেই রাষ্ট্রের কাছে বিদেশি। কারণ আমরা তাঁদের কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সঙ হয়ে থাকতে পারব না। আমরা পারব না ইতিহাস বিকৃত করতে, নিজেদের সংস্কৃতিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে।
আমাদের চোখের সামনে নাগরিক পঞ্জী করে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে এ দেশে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প করার ফ্যাসিস্ট পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার বিরুদ্ধে যতক্ষণ পর্যন্ত বিরোধিতা করার বিরোধিতা করব। এর জন্য আমাদের জন্য আমাদের শুনতেব হয় আমরা দেশবিরোধী, তবে, অবশ্যই, আমরা সেই দেশের বিরোধী, যে দেশে রাজ করে ফ্যাসিস্ট শাসন।
আমরা বরং সেই দেশের নাগরিক, যে দেশ নিজেদের প্রাণভয় তুচ্ছ করে দলবদ্ধ ভাবে এই ফ্যাসিস্ট আগ্রাসন এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এই দেশের কোনও মানচিত্র নেই। এই দেশের মানুষ আছে। এই দেশের কোনও কাঁটাতার নেই, কিন্তু এই দেশের রয়েছে মানববন্ধন।
আমরা হিন্দুরাষ্ট্র ভারতবর্ষের বাসিন্দা হতে ঘৃণা বোধ করি।
লাল সেলাম জানাই সেই ভারতবর্ষকে, যে রুখে দাঁড়িয়েছে হিন্দুরাষ্ট্র ভারতবর্ষের বিরুদ্ধে।
সম্পাদকীয় দপ্তর- বেবী সাউ হিন্দোল ভট্টাচার্য মণিশংকর বিশ্বাস শমীক ঘোষ সন্দীপন চক্রবর্তী