Tuesday, December 24, 2019

সুদীপ ঘোষাল




ভয়


শ্যামসুন্দর ছেলেটাকে সঙ্গে নিতে চায় না। কি একটা মনের রোগ শ্যামকে জ্বালিয়ে মারছে। কাউকে বলতে পারছে না। জমির ৭১ সালের আগের দলিলটা হারিয়ে গেছে। সেই থেকে মনে একটা ভয় ঢুকে গেছে শ্যামের। হয়ত কিছুই হবে না। সে খবরে শুনেছে, গুজবে কান দেবেন না। তবু একটা ভয় মনের তৃতীয় স্তরে বাসা বেঁধে বসে আছে। কিছুতেই ভয়টা বেরোচ্ছে না। রবীন্দ্রনাথের গান সে ভালই গায়। কিন্তু এখন ছেলেটা বলছে, বাবা তোমার গান বন্ধ কর। বাবা গো গাধার গলা। চেলেটা মেট্রোরেল দেখবে বলে ঝোঁক ধরেছে। ওর মা বার বার বলছে, একবার যাও ঘুরিয়ে নিয়ে এসো। তোমার পাগলামিটাও দেখবে চলে যাবে বাইরের হাওয়া পেয়ে। আবার ভয়। ছেলেটাকে নিয়ে যদি মেট্রোরেলের নিচে লাফ দিয়ে পড়ি তো পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে সব ভয় শেষ হবে। কিন্তু ছেলেটা কি দোষ করল। ওর জন্য একটা বাড়ি করেছি। ওকে পৃথিবীতে এনেছি। কর্তব্য একটা আছে তো। কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্পে যদি রাখে তাহলে বাড়িটা কার হবে। খোলা হাওয়া কি বইবে?  সবুজ মাঠ কি হাসবে?  

আবার ছেলেটার মা বলল, যাও না কলকাতা ঘুরিয়ে নিয়ে এস ছেলেটাকে। ওর মা কি ছেলেমানুষ , একটা বদ্ধ পাগলের সঙ্গে ছেলেকে পাঠিয়ে দিচ্ছে কলকাতা। না নিয়ে গেলে হবে না। ছেলেটার প্রাণ আগে। তারপর যা হয় দেখা যাবে।

শ্যামসুন্দর ফুল বিক্রি করে। ফুলওয়ালার কাছে বিচিত্র রঙের সব ফুল। বাহারি শত রঙ। ছেলেটা বলে, বাবা ফুলের রঙ কে বাছাই করে। গোলাপ লাল, টগর সাদা, জবা লাল। যদি টগর লাল আর জবা সাদা হত তাহলে কি দোষ হত?

শ্যাম বলল,কি করে কি হয়, ফুল কেন সাদা হয় আমি বলতে পারব না। এ সব কারিগরের খেলা।
ছেলে বলে, কে সেই কারিগর?  

---- জানি না

---- কোথায় বাড়ি তার?  

--_ জানি না

----আমি একবার দেখব তাকে।

ছেলেরা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। শুধু প্রশ্ন করে। কিছুই বুঝতে চায় না। শুধু অবাক চাহনি। অবাক প্রশ্ন। 

স্টেডিয়াম পাড়ার শ্যাম আজ বিশ বছর হল এখানে এসেছে। তার দেশ ভারতবর্ষ। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আজ শ্যাম সন্ধ্যাবেলা মদ খেতে বসেছে। কাগজ পেতে বিলের সবুজ মাঠে পাঁচজন বন্ধু।

শ্যাম বলে, এই দ্যাখ কাগজে ভারতবর্ষের মানচিত্র।আমি এই দেশের লোক। 

এক বন্ধু বলল, বাঁড়া কাঙালচোদা দেশে আমার জন্ম।

তিন পেগ পেরিয়ে চার পেগেই সকলে নিষিক্ত নেশায়। চলছে এখনও ফোয়ারা। ম্যাপের ওপরে রাখা কষা মাংস।

আর একজন বন্ধু বলছে, শালা মানচিত্রের মাংস খেতে ভালোই লাগছে বানচোত।

শ্যাম বলছে, মাংসটা মুরগির শালা। মানচিত্রের আবার মাংস হয় না কি?

আর একজন বলে, হয় হয়। এই নক্সায় বাস করে নক্সাকাটা মানুষ। তাদের রক্তমাংস খেয়ে বানচোত কিছু নেতার এত বাড় বাড়ন্ত । কোটিপতি, লাখপতি বিবেকহীন ভিখারিচোদা জানোয়ার। ওদের বাড়ি, গাড়ি,টাকা সব আছে। তবে শালা আমাদের মত মন নেই। শালারা আনন্দ বলে কিছু জানে না। শুধু রক্ত খায়। আর আমরা রক্তদাতা। ওদের ভিখারি মনে করি।

শ্যাম বাড়ির পথে আসে। এখন নেশা করে বেশ ভাল লাগছে। ভয়টা এখন শ্যামকেই ভয় পাচ্ছে। শ্যাম রাস্তায় একা চলেছে ভয়কে জয় করে। 

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়

হ্যাঁ, অন্যান্য বারের মতো সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে নয়, বরং খুব সচেতন ভাবে, স্পষ্ট ভাবে বলছি, আমরা এন আর সি-র বিরুদ্ধে, সি এ এ -এর বিরুদ...

পাঠকের পছন্দ