Tuesday, December 24, 2019

সুমনা সান্যাল





ছায়া

শবর এসেছে আজ। ভ্যানগাড়ি পুস্তিকা তারাও এসেছে। সেই কবে জুমচাষে চলে গ্যাছে
মোড়লের ছেলে; এই গ্রাম ফলতঃ বর্শাহীন
শামুকের খোল ছুঁয়ে যে ছায়া নেমেছে
তাকে দেখে শিউরে উঠছে মাহাতো বস্তির
সব মেয়ে মরদের দল, গীর্জার জানলা দিয়ে
নেমে আসছে গ্রাহাম স্টুয়ার্টের গান
আধপোড়া ঝলসানো ভূতের গল্প ভুলে
মাঝেমাঝে পোড়াগন্ধ ভেসে আসে
সরকারি নথি থেকে বহুদূরে এদের আবাস
এইসব প্রেতযোনি। মাহাতোর মেয়ে জানে
উলগুলানের গান বাহা আর টুসুর পরব
'কাগজ সর্বভুক' এ কাহিনী জেনে আজ
সারা গ্রাম কেঁদে ফিরছে 'কোথা ভল্ল কোথা ভল্ল
কোথা হে বড় খাঁ গাজী? এ কোন ঠাকুর এলে?'
প্রণাম হে কূট জন্মদাতা তাসাপার্টি তরোয়াল 
পালাগান ভেসে গ্যালো মরে গ্যালো 
সোনার লখাই; টুসুমণি ডুব দিলো জলে
ঝকঝকে সোনার কলস, মৃত গ্রামদেবতার 
অভিশাপ নিয়ে প্রতিদিন আমাদের রাজদর্শন




এসেছিলে তবু...

এই সেই ঘোষণাপত্র যা তিনি শুনিয়েছেন 
কিছুক্ষণ আগে। যা ঘটবে যা অনিবার্য 
আজ তাতে সরকারি ছাপ পড়ে গেছে
পরিমলে লুব্ধ মধুপ লালা ঝরা সঞ্চালক
এইমাত্র ছবি। 
কোনো কোনো হরিদাস এসব গল্প ছেড়ে
রাস্তায় নেমেছে। থাকে এরা। চিরকাল 
থেকে যায়। দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে শ্মশানে 
বা জানাজায়। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ
পিছলে যায় রাজদ্বারে, তাদের ওই
ইতরপ্রণাম প্রচারের রীতিনীতি জানে
তিনি পড়ে চলেছেন কতোখানি ক্ষতিগ্রস্ত 
রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জোড়হাতে শুনছেন হেডমাস্টার 
বালিকা বিদ্যালয়, ওয়াগন ব্রেকারের কপালে 
তিলক আঁকা ভাই।  মনুস্মৃতি পড়ছেন অধ্যাপক 
কতোগুলো মসজিদের নিচে চাপা পড়ে
আছেন দেবতা প্রত্নবিদ পাঠ করছেন আর
রক্ত গরম হচ্ছে সভার...মাটি খুঁড়ে তুলে আনো
এ মাটি ওদের নয় দু'চারটে শ্যামাপোকা
ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছে কতোকাল, এ সময়
কে হে বাবা ধর্মবক উঁকি দিচ্ছ ঘরে?
পাওনি কাগজ? মনে নেই জন্মতারিখ?
নথিপত্রে ছাপ পড়বেএইবার,  তুমি শালা
ঢ্যামনা মাল এসেছিলে তবু আসো নাই
শ্বাসকষ্ট আর ওই পিরালী বামুনের গান
কে তোমাকে শিখিয়েছে সন্ধেবেলা গলা সাধা
সাবিনা খাতুন? মাস্টারের নাম বলো মামণি
তুমি কার ঈশ্বরী? লাভ জিহাদের গান গেয়ে
ঝুমঝুম ঝুমঝুম রানার চলেছে পথে
হেসে উঠছে ছুঁড়ে দেওয়া পাঁচ একর জমি
ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে পাথর এই
দু'হাজার উনিশেও। কতো দ্রুত মরে যেতে পারো
আমি অতো খবর রাখিনা। শুধু জানি 
এই সেই মহাকাল; রোহিনী কৃত্তিকা আরও 
সমস্ত নক্ষত্র থেকে নথি হাতে নেমে আসছেন
পূর্বপুরুষ। ওঁদের প্রণাম করো। হাওয়া দিচ্ছে
জল-বাতাসা এগিয়ে দাও মাটি ছাড়ার আগে

আমরা তো উপলক্ষ শুধু

1 comment:

  1. খুব ভালো লেখা সুমনা। তীব্র। এর আগে তোমার যে কবিতাগুলো পড়েছি, তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা চলন, উচ্চারণ।

    ReplyDelete

একনজরে

সম্পাদকীয়

হ্যাঁ, অন্যান্য বারের মতো সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে নয়, বরং খুব সচেতন ভাবে, স্পষ্ট ভাবে বলছি, আমরা এন আর সি-র বিরুদ্ধে, সি এ এ -এর বিরুদ...

পাঠকের পছন্দ