Wednesday, December 25, 2019

কুশান গুপ্ত






তিনটি কবিতা

ক্ষুধা

শেখোনি পবিত্র হতে মন্ত্রপুত জলে।
সম্মতি-স্বভাব শেখো, হে বাচাল, অতি বেঁড়েপাকা,
প্রয়োজনে হতে হয় হেঁটমাথা, প্রয়োজনে যথোচিত মৌন।                                                            জাতীয় সঙ্কট এলে ব্যক্তিগত চুম্বনেও লিখে দিতে হয় দেশগাথা

সীমান্তে যখন যুদ্ধ, ক্ষুধার প্রসঙ্গ, জেনো, বড়বেশী বেমানান, গৌণ।

তখন বারুদের গন্ধ মনে হয়
শুধু গুগগুল, ধুপধুনা।
তখন মিডিয়া ফোঁকে অহরহ কুরুক্ষেত্র-শিঙা।
জাতীয়-হৃদয় জুড়ে
বেজে চলে পরিত্রাহী কুচকাওয়াজ, ঘোড়-সমারোহ।
তখন সম্রাট বলে প্রতিভাত হয় শুধু বানিয়া-দালাল।
তখন সনাক্ত করা হয়
কেবল তোমাকে, আমাকে...
যেহেতু, ক্ষুধার কথা বলি।





তারপর, হারানিধি

সমূহ গ্লাসের তুমি তদারকি করো আজ,
আমি শুধু গাই...

আমি ততক্ষণ গাই মনে মনে মাধবী-মধুপে
তারপর কী যে লিখি হারানিধি
:
অথচ অ্যাজেন্ডা আছে নানাবিধ, সামাজিক দায় বড় দায়
;
বিশেষত রাজ্যপাল এ-বিষয়ে, মাননীয়, বলেছেন...
সেই সাংবিধানিক পরামর্শ মানি, এসো, ফোকটে বয়কট করি যথাক্রমে কাশ্মীর ও কন্যা কুমারী কা,
 
এবং দু-ঢোক গিলি, অতঃপর,
বিধিমত ধুঁয়াধার রজনী মানাই।

তার আর পর নেই, হারানিধি, তুমি ঢালো, আর আমি খাই...






 গল্প

সেইস গল্পগুলি আমিও শুনেছি, কোথাও যা লেখা ছিল না।
সেইসব গল্পেই বিবৃত ছিল কবরস্থ সভ্যতার পিতল-পিলসুজ, আর
আদিম গুহাকরোটির অনির্দিষ্ট ঠিকানা...
জেনেছিলাম কীভাবে আবিষ্কৃত হয় ঘুমন্ত দ্বীপ
আর রক্তস্নাত সোনালী ভূখন্ড।
চিরায়ত সেইসব গল্পেই
গভীর জলের নীচে অনায়াসে ঘুমিয়ে থাকত কৃষ্ণভ্রমর,
জেগে থাকত অলীক রূপো-রঙা মাছ।

সামান্য হাসির, আর, অনেক কান্নার গল্প ক্লান্তিহীন শুনে গেছি তোমাদের কাছে।
শুনেছি বন্যা ও মন্বন্তরের রুদ্ধশ্বাস কাহিনীগুলি কতদিন
তোমাদেরই মাটির দাওয়ায় বসে।

শুনেছি, একটা গ্রামে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের কাছে আছে একটা দীর্ঘ ক্যানেল...
তার একদিকে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানো দুরন্ত একচক্ষু দানব ও তার দলবল,
অন্যদিকে তীর-ধনুক
হাতে কালো একগাদা অর্ধনগ্ন মানুষ...
শুনেছি, সেই কালো মানুষের দলে আমার পিতাও নাকি ছিল।
শুনেছি, মুহুর্মুহু গুলির শব্দের পাশাপাশি
নাকি শাঁখও বেজেছিল একদিন সেই গ্রামে।
গল্পই, তবু
একদিন কীভাবে আমি দেখে ফেলেছিলাম একটা ক্যানেলের ধারে,
একটা অযত্নে পড়ে থাকা রংচটা শাদা শহীদের বেদী,
যার গলা অবধি ঢেকে রেখেছে চতুর্দিকের আগাছা আর এক মানুষ ঘাস,

আর কিছু ভাসন্ত কাশফুল।



2 comments:

  1. "জাতীয়-হৃদয় জুড়ে বেজে চলে পরিত্রাহী কুচকাওয়াজ ঘোড়া-সমারোহ"

    অনবদ্য,কুশান গুপ্ত

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর লেখা। কিন্তু শুধু কালচারালি এই বর্বরতা কে প্রতিরোধ করা যাবে না। কবিতাকে একটা সময় ছুটি দিতে হবে।

    ReplyDelete

একনজরে

সম্পাদকীয়

হ্যাঁ, অন্যান্য বারের মতো সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে নয়, বরং খুব সচেতন ভাবে, স্পষ্ট ভাবে বলছি, আমরা এন আর সি-র বিরুদ্ধে, সি এ এ -এর বিরুদ...

পাঠকের পছন্দ