Tuesday, December 24, 2019

অমর মিত্র






দেশজুড়ে শীত

কনকনে শীত ধেয়ে এসেছিল বছরখানেক ধরে। কেন ? আমরা তো পূর্ববঙ্গের মানুষ। তখন খুলনা জেলা সাতক্ষী্রা  মহকুমা। তা এখন সাতক্ষীরা জেলা হয়ে গেছে। বসিরহাট শহর থেকে মাইল কুড়ি দূরে সেই সাতক্ষীরে। সাতক্ষীরে থেকে ৫ মাইল দূরে আমাদের গ্রাম ধূলিহর। বেতনা নদী সেই গ্রামের ধারে। কপোতাক্ষ কিছুটা দূরে বুধাহাটা পেরিয়ে বড়দলে। মায়ের কাছে শুনেছি বড়দলে স্টিমারঘাটা ছিল। আমার মামার বাড়ি বাঁকা-ভবানীপুর গ্রাম কপোতাক্ষর ধারে। মামার বাড়িও একেবারে কপোতাক্ষর.২৫০ মিটার দূরে হবে। আমি ২০১৬ সালের ৬-ই নভেম্বর  মামার বাড়ি প্রথম দেখি। কপোতাক্ষ মজে গেছে। স্টিমার কেন তালডোঙাও চলে না এখন।  

১৯৪৭-এর ১৪-ই আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্ম নিল দ্বিজাতিতত্বের সূত্র ধরে। তখন আমার জন্ম হয়নি। কিন্তু শুনেছি, তখন খুলনা জেলা পাকিস্তানের ভিতরে ছিল না। হিন্দু অধ্যুষিত খুলনা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৮-ই আগস্ট খুলনা চলে যায় পাকিস্তানে, মুর্শিদাবাদ চলে আসে ভারতে। মুর্শিদাবাদ ছিল মুসলমান অধ্যুষিত জেলা। কিন্তু মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানে গেলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যেত। আমার বাবা তৎকালীন অবিভক্ত দেশে  বাংলা সরকারে চাকরি করতেন। দেশভাগের সময় অপশন দিতে বলা হয় সরকারি কর্মচারীদের। বাবা ভারত সরকারে  অপশন দিয়েছিলেন। এবং বহরমপুরে সীমান্ত উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের  দায়িত্বে ছিলেন।  উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের কাজ করতে করতে তাঁর বদলি হয় ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন অফিসে লিয়াজ অফিসার হিশেবে। ১৯৫০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকরিতে জয়েন করেন। কারণ এপারে আমাদের ঠাঁই ঠিক করতে হবে তো। বসিরহাট সংলগ্ন গ্রাম দণ্ডীরহাটে ১৯৫০ সালে জমি কিনে বাড়ি করা হয়। সেই আমাদের পাকাবাড়ি হলো। সেই বাড়ি ছিল বাবাদের তিন ভাইয়ের নামে। ৮৯ শতক জমি। এইটুকু জানা ছিল।  বাবা কলকাতায় চাকরি করতেন রাইটার্স বিল্ডিঙে, তার আগে ঘাটাল এবং কাঁথি ঘুরে এসেছেন। আমাদের ভাড়াবাড়ি   বেলেঘাটা হয়ে বেলগাছিয়ায় ১৯৫৪-৫৫ সাল থেকে। এখনো সেখানে আমি থাকি। আমাদের যে অংশ দণ্ডীরহাট গ্রামের বাড়িতে, তা রয়েছে। শুধু সেখানে গ্রামের এক দুস্থ জামাইকে  থাকতে দিয়েছিলেন বাবা। তিনি এখনো আছেন। এমনিই ভোগ করেন। আমরা যাই না। বাবার ভূসম্পত্তিতে আসক্তি ছিল না। আমাদেরও আছে বলে মনে হয় না। সেই বাড়িতে কতদিন যাইনি। জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর ধাক্কায় আমি দণ্ডীরহাটের বাড়ির দলিল খুঁজতে থাকি। ঘুম উড়ে যায়। আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ ঠিক করে যেতে হবে তো।  সেই জমির দলিল হারিয়ে গেছে। দাগ নম্বর জানি না। কী দিয়ে পর্চা কিংবা দলিল বের করব?  দুই কাকা তাঁদের অংশ হস্তান্তর করে চলে এসেছেন দণ্ডীরহাট থেকে। খুড়তুতো ভাইদের কাছে কিছু নেই।  আমি যুগন্ধর পত্রিকার  স্বরূপ মণ্ডলের মাধ্যমে যেভাবে হোক জমির দাগ নম্বরগুলি পাই। স্বরূপের বাড়ি দণ্ডীরহাট গ্রামে। দাগ নম্বর ধরে   রিভিশন্যাল সেটেলমেন্টের পর্চা বের করতে পারি বসিরহাট বি এল এল আর ও-র অফিস থেকে। স্ক্যান করা সরকারের শিলমোহর সম্বলিত পর্চা দেখে বুঝতে পারি বাংলা সন ১৩৫৭, অর্থাৎ ইংরেজি সন ১৯৫০ থেকে বাবাদের তিন ভাইয়ের নামে রায়ত দখলীস্ব্ত্বের অধিকার  দেওয়া আছে। আমি জমি বুঝি। এই দপ্তরে চাকরি করেছি, ফলে নাগরিকত্বর প্রমাণ  কী হতে পারে আমাদের, সেই নথি  সম্পর্কে আমার  একটা ধারণা ছিল। কিন্তু নাগরিকপঞ্জীতে নাকি ভারত সরকার ১৯৪৮ সালের ১৯শে জুলাই একটা তারিখের সীমা করেছেন, এমন কথা শুনেছি অনেকবার। ফেসবুকে তা লেখা হয়েছে অনেকবার। তারপরে যারা এসেছে তারা সব শরণার্থী। এখনো শরণার্থী। তাদের আবেদন করতে হবে নাগরিকত্বর জন্য। মুসলমান বাদ। মুসলমানের নথি দিয়ে এই দেশে বসবাসের অতীত ইতিহাস দেখাতে না পারলে ঘ্যাচাং।  অনুপ্রবেশকারী। অদ্ভুত আইন। হিন্দু  আবেদন করলে সরকার বিচার করে নাগরিকত্ব দেবে। এত বছর থেকে, নিজের দেশ নিয়ে গর্ব করে এই অবস্থা। আবেদন করতে হবে? করে নিজেকে শরণার্থী বলে ঘোষণা করতে হবে। হা ভগবান।  পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সব মিথ্যে। এগুলি কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা কেন ? 

   এইসব শুনে  আমি  বাবার চাকরির নথিপত্র খুঁজতে আরম্ভ করি। বাড়িতে কিছুই নেই। মৃত্যুর আগে বাবা মা থাকতেন সল্টলেকে দাদার বাড়িতে। সেখানে কিছুই গুছোন নেই। পেনশন বই নেই। পাশবই নেই। ১৯৭২ সালে বাবা অবসর নিয়েছিলেন। আমার ৮১  এবং ৭২ বছরের দুই দাদা মনোজ এবং উদয়ন আমাকে ফোন করতে লাগলেন বারবার, কী হবে?  আমি পর্চা হাতে পেলে আশ্বস্ত হয়েও বারবার জিজ্ঞেস করছেন হবে তো রে।  স্ক্যান করা পর্চা মানবে তো ? তুই যা করার কর। বাবার চাকরির সময় নিয়ে তিন ভাইয়ে কথা হতে থাকে। ঠিক পারটিশনের সময় বাবা ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমার কালিহাতিতে। বাবা ঋণশালিশী বোর্ডের আধিকারিক ছিলেন। ঋণগ্রস্ত চাষীদের ঋণ মকুব করে বেড়াতেন। বড়দা, মেজদা তখন ছোট। আমি খুঁজতে লাগলাম বাবার চাকরির নথি। দিল্লিতে লেখক  সৌরাংশু  সিংহ থাকেন। ভারত সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি। অসম্ভব ভালোবাসেন আমাকে। তাঁকে ফোন করেছি। সব বলেছি। যাঁরা ভারত সরকারে অপশন দিয়েছিলেন সরকারি কর্মচারী তাঁদের বিষয়ে কি তখন  গেজেট নোটিফিকেশন হয়নি। বাবা যে ভারতীয় হাইকমিশন ঢাকায় ১৯৪৮-৪৯ কিংবা ৪৭-এ লিয়াজ অফিসার   ছিলেন, সেই তথ্য কি গেজেটে থাকবে না ? থাকার কথা। সৌরাংশু বলল থাকার কথা। জাতীয় মহাফেজখানায় খোঁজ করবে। আমার ৮০ বছরের দাদার প্রতিদিন ফোন, কী কোনো খবর এল ? খবর আসেনি।  বড়দা বলছেন, আমার স্কুল ফাইনাল সারটিফিকেটটা পাচ্ছি না। বি, এ পাশ ১৯৫৯ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে। দ্যাখ পরশু দিন স্কুল ফাইনাল সার্টিফিকেট দেখলাম, এখন পাচ্ছি না, কোথায় যে রাখলাম? তুই বাবার চাকরির ডকুমেন্ট জোগাড় কর।  আমি তখন ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন প্রকাশিত সাহিত্যপত্র ভারত বিচিত্রার  সম্পাদক নান্টু রায়কে বলি হোয়াটসআপে। কল করে বলি সেখানে কি নেই রেজিস্টার ? নান্টু বলেন নেই। শ্রীনিবাসন নামে এক হাইকমিশনার ছিলেন, পুরোন নথি পুড়িয়ে দিয়েছেন অনেক। আর হাইকমিশনের বাড়ি বদলেও কিছু গেছে। বুঝুন শ্রীনিবাসন পুড়িয়ে দিয়েছেন। পুড়িয়ে দিয়ে আমাদের সব্বোনাশ করে গেছেন।
  
  মনোজ মিত্র সারা ভারতেই পরিচিত। আমিও কিছুটা পরিচিত। সমস্তজীবন এই দেশ আমার দেশ বলে ভেবেছি। ধ্রুবপুত্র উপন্যাস লিখেছি দূর মধ্যপ্রদেশে বারবার গিয়ে। উজ্জয়িনী তার পটভূমি।  নি্রূপায় মানুষের আতঙ্ক নিয়ে নিসর্গের শোকগাথা লিখেছি মহারাষ্ট্রের লাতুরে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সেখানে গিয়ে। মরাঠী গ্রামের মানুষ তাঁর মূল চরিত্র। ভারত আমার দেশ। গল্প লিখেছি বিহারের দলিত হত্যা নিয়ে। এসব কি ডকুমেন্ট হয় না আমি ভারতীয় কি না ? আমার চেয়ে আমাদের চেয়ে বেশি ভারতীয় কে ?    ভারত সরকারের  সাহিত্য অকাদেমি পেয়েছিলাম। আমাদের যদি এই উদ্বেগ হয়, সাধারণ মানুষের কী হতে পারে সহজেই অনুমেয়। কে কোন কাগজ রাখে বলুন। হাইকমিশনই তার পুরোন নথি পুড়িয়ে দেয়, রাখে না কিছুই তো সাধারণ মানুষ সাতপুরুষের কাগজ রাখবে ?  এই আতঙ্ক ভয়ানক। ৭০-৭৫ বছর একটা দেশের নাগরিক হয়ে থেকে এখন তার পরীক্ষা দিতে হবে? এই যে আধারের সঙ্গে মোবাইল নং জোড়া, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড জোড়া...এই করতে করতে ক্যা ( CAA ) আইন। এন আর সির কথা বলা সবই আতঙ্কের। আসামে ১৯ লক্ষ মানুষ এন আর সি ছুট। এই বাঙালি নাকি ঘুসপেটিয়া, উইপোকা ( মানবাত্মার কত অসম্মান ! )। অনুপ্রবেশকারী। মুসলমান কেন বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসবে ভিটে বাস্তু ছেড়ে তা আমি বুঝি না। যদিও আসে কাজের খোঁজে, তার সংখ্যা কত হতে পারে? এসেছে উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু। আসামের এন আর সি ছুট ১৯ লক্ষের ভিতরে   কতজন ১৯৭১-এর পরে এদেশে এসেছেন আমি জানি না। কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বহু যুগ এদেশে বাস করা উভয় ধর্মের মানুষ।  নিষ্ঠুর সরকারি কর্মচারী কলমের খোঁচায় তাদের নাগরিত্ব ঘুঁচিয়ে দিয়েছেন।  যিনি এন আর সি-র মূল দায়িত্বে ছিলেন, তিনি অসততার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। নাম নথিভুক্ত করতে মানুষের হয়রানির শেষ হয়েছে। সেখানে অর্থের লেনদেনও নাকি হয়েছে। এ তো হয়েই থাকে। সরকারি কর্মচারীর বেশিরভাগ সৎ, কিছু অসৎ। অসৎ কর্মচারীর দাপটই বেশি দপ্তরে দপ্তরে। এন আর সি তো জীবন মরণ সমস্যা। সেখানে মানুষ এখান থেকে ওখানে ছোটাছুটি করে মরেছে কত।

এইটা জানি এদেশে বহু মানুষ ভূমিহীন। জমি থাকলেও পর্চা, দলিল বন্ধক দিয়ে চাল কিনে ভাতের ফুট দেখে  বাঁচে। দলিল, পর্চা সব জমা রাখে গ্রামের অবস্থাপন্ন মানুষের কাছে। রেখে তারই মজুর হয়। এসব দেখা। এই কারণেই নথিপত্র অমিল হয়। বহু মানুষের বাস্তুভিটে নেই। ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি আইন করেছিলেন যাঁরা অন্যের জমিতে, যেমন ধরুন পুকুরপাড়ে, পতিত জমিতে ঘর বেঁধে থাকেন তাদের বাস্তুজমি অধিগ্রহন আইন ১৯৭১-এ দু’কাঠা করে বাস্তু রেকর্ড করতে হবে। বিনয় চৌধুরী যখন ভূমি সংস্কার মন্ত্রী তিনি এই আইন করেছিলেন।  সেই আইনে শুনানি করে অনেক পরিবারেকে  নিজস্ব ভিটা দেওয়ার কাজ করেছি। এসব একাত্তর সালের পরে হয়েছে। এই বাস্তুহীন মানুষজন মূলত তথাকথিত  নিম্নবর্গের। বাউরি, বাগদি, ভুমিজ, এবং আদিবাসীও। আদিবাসীরা তাদের জমি হারিয়ে হারিয়ে ভূমিশূন্য হয়েছে এ আমি দেখেছি। ‘দানপত্র’ নামে একটি গল্প লিখেছিলাম ১৯৮০ সালে। একটি কথা ভাবতে হবে,  এই মাটির অধিকার তাদের সব চেয়ে বেশি। তারাই তাদের জমি হারিয়ে  ভূমিশূন্য হয়েছে। আমেরিকার নেটিভ,  মূল অধিবাসীরা, রেড ইন্ডিয়ান এবং অন্যান্য উপজাতিরা রাষ্ট্রপুঞ্জে একটি আবেদনপত্র জমা করেছিল, তার বিষয় ছিল ‘তাদের হারিয়ে যাওয়া মাটি, পাহাড়, অরণ্য, নদী, আকাশ বাতাস সব ফেরত পাওয়ার অধিকার’। তাদের মাটির উপরই তো ধনগর্বী দেশ আমেরিকা। এই ঘটনা এই দেশেও ঘটেছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক উপন্যাসে  জমি বন্দোবস্ত পায় ধনী রাজপূত জোতদার রাসবিহারী সিং। আদিবাসী রাজা দোবরু পান্না সব জমির অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন আগেই।

 হে উচ্চবর্ণ,  তুমি কী  নথি দেখতে চাও?  তুমি দিকু। তুমিই বহিরাগত। যাদের মাটি তারাই উচ্ছেদ হবে? যত বড় বড় প্রকল্প হয়েছে এদেশে, তারাই ত্যাগ করেছে। অভিমন্যু মাহাত কবিতা লিখেছেন, তাঁদের তো মূর্তি পুজো নেই। তাঁরা পাহাড়, গাছ, গ্রাম দেবতির থানে মানত করেন। তাঁদের ধর্মে সবই লৌকিক আচার, উৎসব। টুসু ভাদু কোন ভগবান হিন্দু ধর্মে ?  ভারতবর্ষ এমনি তো ছিল। এর কী হবে ?  মানুষের কাছে নথি থাকে না। যে মানুষটি ১৯৪৭-এর আগে বরিশালে জন্মেছেন, তিনি অখণ্ড ভারতেই জন্মেছেন।  দেশটা  আতঙ্কের দেশ হয়ে গেল কয়েকবছরেই।
  
 অনুপ্রবেশকারী ধরতে পুলিশ, গোয়েন্দা যথেষ্ট। জেরা করলেই সত্যি কথা বলে দেয় সাধারণ মানুষ। তার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলা কেন ? নোট বাতিলের কথা মনে আছে। কী উদ্বেগ! ব্যাঙ্কের লাইনেই মারা গেছেন কতজন। ফলাফল শুনেছি শূন্য। কালো টাকা ঘরে আসেনি। হিশেবে বাজারে যে  টাকা ছিল, সেই টাকাই  ব্যাঙ্কে ফিরেছে। কালো টাকা গেল কোথায়? নাকি কালো টাকা আগেই শাদা হয়ে গিয়েছিল।  সেই টাকা না ফেরার কথাই তো ছিল।  আর এন আর সির আতংকে আত্মহত্যা করেছেন কতজন। কেন এই ভাবে মানুষের ভোটে জিতে মানবাত্মার অপমান ?  ধর্ম নিরপেক্ষ দেশটির জন্য কী গর্ব ছিল আমার। তা শেষ হয়ে যাবে ? ইসলামিক রাষ্ট্র আছে বলে হিন্দু রাষ্ট্র করতে হবে?  ওই রাষ্ট্র অন্ধকারে ডুবেছে বলে আমাদেরও ডুবতে হবে। ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তান ক্রমশ আতঙ্কের রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ, হত্যা, সামরিক শাসন, ভারতের গৌরবজনক স্থান সেই রাষ্ট্রের নেই। বাংলাদেশে কতলক্ষ মানুষ মেরেছিল তারা!  ডিটেনশন ক্যাম্প! কী ভয়াবহ তার ধারণা। একেবারে নাৎসি ক্যাম্প যেন। এর বিপক্ষে সাধারণ মানুষ জেগেছে। ছিন্নমূল মানুষ  যাঁরা এদেশে এসেছেন তাদের নাগরিকতা দিন সোজা পথে। কেন ঘোষণা করবে তারা এখনো শরণার্থী। এত বছর বাস করে শরণার্থী হবে কেন? অধিকার আছে। দেশ আমরা ভাগ করিনি। রাজনৈতিক নেতারা ভাগ করেছেন।  অখন্ড ভারত আমার দেশ ছিল। ভাগ করলেন কেন ? আমরা তো চাইনি। বাঙালি ঘুসপেটিয়া ! বাঙালি এই ভারতের স্বাধীনতা এনেছে। বাঙালি  এই উদ্বেগের ভার কেন নেবে  ? এর ভিতরে ব্যাঙ্কের টাকা নিয়ে ভয় ঢুকেছে। জীবনদায়ী ওষুধের দাম পাঁচগুন হয়ে গেছে। এইটা কি সভ্য দেশ?  এক এন আর সি সমর্থক, হিন্দু রাষ্ট্রের সমর্থক  অতি সাধারণ এল আই সি এজেন্ট বলছিল আমাকে, ‘সুদ কমছে, কমবে, আমেরিকায় সুদ দেয় না ব্যাঙ্কে।’  হু দেয় না। খাদ্য বস্ত্র ওষুধ কত শস্তা  তা জানো ?  ওদের দশ টাকা মানে দশ ডলারে একদিনের খাদ্য হয়ে যায়।  সে খুব সমর্থক ছিল। একদিন এল শুকনো মুখে।  আমি বললাম কাগজপত্র রেডি কর। কীভাবে কী করবে বললাম।  ভয় ঢুকেছে তার ভিতরে। তাদের তো একাত্তরের আগের কাগজ কিছু নেই। বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া থেকেছে। এই কবছর আগে একটা শস্তার ফ্ল্যাট কিনতে পেরেছে। এপারে ১৯৭১-এর আগে পরে জন্ম হয়ত। কিন্তু তার জন্ম নিবন্ধন করা ছিল না। পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল হয়ে এসে বাবা ব্যবসা করতেন রেডিমেডের। জামা-কাপড়ের হকার। তার কোনো লাইসেন্স লাগত না। কী করবে ? বলুন কী করবে ? সরকার অভিভাবক। সেই সরকার যদি তার নাগরিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, নাগরিকের পথে নামা ব্যতীত উপায় নেই।  অনুপ্রবেশ করলে বি এস এফ-এর উপর দায় চাপান। সব বন্ধ হয়ে যাবে। গোয়েন্দা লাগান, খুঁজে বের করা যাবে।  হায় আমার দেশ! তুমি কবে আমার স্বপ্নের দেশ হয়ে উঠবে। বসন্তদিনের দেশ। আতঙ্কের  যে শীত নেমেছে এই দেশে তার অবসান হোক।

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়

হ্যাঁ, অন্যান্য বারের মতো সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে নয়, বরং খুব সচেতন ভাবে, স্পষ্ট ভাবে বলছি, আমরা এন আর সি-র বিরুদ্ধে, সি এ এ -এর বিরুদ...

পাঠকের পছন্দ